ইসলামের মুখোশে রাজনীতির ভয়াল খেলা: জামায়াতের সত্যিকারের রূপ ফাঁস!

ইসলাম—একটি শান্তির ধর্ম। যেখানে ন্যায়, মানবতা, সহানুভূতি ও ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে সমাজ গঠনের আদর্শ দেওয়া হয়েছে। অথচ কিছু গোষ্ঠী এই মহৎ ধর্মের নাম ব্যবহার করে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম অপরাধ করেছে। তাদের হাতে ইসলাম হয়েছে কলঙ্কিত, মানুষ হয়েছে বিভ্রান্ত। বাংলাদেশে এমন এক রাজনৈতিক দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, যারা ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা ও বিবেককে বন্দি করতে চেয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং পরবর্তী রাজনীতিতে জামায়াতের ভূমিকা ছিল ভয়াবহ, নিষ্ঠুর ও মানবতা-বিরোধী।

১. মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত: ইসলামের নামে বিশ্বাসঘাতকতা

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ যখন পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছে, তখন জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানকে সমর্থন দেয় এবং “ইসলাম রক্ষার” নাম করে হাজারো বাঙালির রক্ত ঝরানোর আয়োজন করে।

প্রমাণ:

  • জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ তখন গঠন করে আল-বদর, আল-শামস বাহিনী।

  • এই বাহিনীগুলোই ছিল ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রধান কারিগর।

  • যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়—আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামী প্রমুখ যুদ্ধাপরাধী।

প্রশ্ন: কীভাবে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ইসলামের নামে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং পৈশাচিকতা করতে পারে?

২. ইসলামের অপব্যবহার: ধর্মকে বানিয়েছে রাজনৈতিক হাতিয়ার

জামায়াতে ইসলামী সবসময় ইসলামকে রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত করেছে। তারা বলেছে, “ইসলাম রক্ষা করতে হলে জামায়াতকে ভোট দিন”। এই বাক্যটি সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের চিন্তাকে বিভ্রান্ত করেছে।

উদাহরণ:

  • তারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার নামে গণতন্ত্র ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে।

  • বারবার নির্বাচনে “ইসলাম বিপন্ন” বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।

  • অথচ তাদের নেতারা দুর্নীতি, বিদেশি প্রভুদের গোলামি, আর যুদ্ধাপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষণ: ধর্ম হচ্ছে মানুষের আত্মিক উন্নয়নের পথ, অথচ জামায়াত ধর্মকে পরিণত করেছে ভয়ের অস্ত্রে।

৩. নারীদের জন্য বিষাক্ত রাজনীতি

জামায়াতের রাজনৈতিক দর্শনে নারীর স্বাধীনতা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা—সব কিছুতেই নিষেধাজ্ঞা। তারা নারীর ওপর কঠোর পর্দা চাপিয়ে দিয়ে তাকে গৃহবন্দি করে রাখতে চায়।

বাস্তব দৃষ্টান্ত:

  • জামায়াত সমর্থিত বইয়ে নারীদের কর্মক্ষেত্র নিষিদ্ধ বলা হয়।

  • সংসদে বা প্রশাসনে নারী নেতৃত্বে জামায়াত বরাবরই আপত্তি জানিয়েছে।

  • এমনকি তারা প্রগতিশীল নারীদের “ইসলাম বিরোধী” বলে অপবাদ দিয়েছে।

এ প্রশ্ন উঠে: ইসলাম কি নারীর সম্মান দেয় না? হজরত খাদিজা (রা.), আয়েশা (রা.)—তারা তো ছিলেন জ্ঞানের, ব্যবসায়ের ও রাজনীতির শীর্ষে।

৪. যুদ্ধাপরাধের বিচার: জামায়াতের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলা

২০১০ সালের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াত নেতাদের মুখোশ খুলে যায়। কাদের মোল্লা, নিজামী, মুজাহিদ প্রমুখের বিচার ও শাস্তির মাধ্যমে প্রমাণ হয়—তারা দেশদ্রোহী, খুনি এবং গণহত্যাকারী।

মূল দোষ:

  • ধর্মের নামে জিহাদের অপব্যাখ্যা করে হত্যা।

  • “কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” বলে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা।

  • নারীদের ধর্ষণকে বৈধ হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়া।

৫. শিক্ষা ও সমাজে জামায়াতের বিষবাষ্প

জামায়াত বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক দর্শন ছড়িয়ে দিয়েছে। অনেক স্থানে শিক্ষার নামে বিষাক্ত রাজনীতি ঢোকানো হয়েছে।

ফলাফল:

  • নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না।

  • তাদের শেখানো হয়—গণতন্ত্র হারাম, পশ্চিমা শিক্ষা হারাম, গান-বাজনা হারাম।

  • দেশপ্রেম নয়, বরং “মুসলিম উম্মাহ”র নামে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্য-ভক্তি শেখানো হয়।

বিশ্লেষণ: ধর্মীয় শিক্ষা হোক পবিত্র, রাজনীতি মুক্ত থাকুক বিভ্রান্তি থেকে।

৬. তরুণদের বিভ্রান্ত করার কৌশল

জামায়াত টার্গেট করে তরুণ সমাজকে—বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। ইসলামি ছাত্র শিবিরের মাধ্যমে বহু শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় চেতনাকে রাজনৈতিক মতবাদের সাথে মিলিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

  • ধর্মীয় বই দিয়ে ব্রেইনওয়াশ।

  • ক্যাম্পাসে অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে।

  • “বিজ্ঞান নাস্তিকতা শেখায়”, “নারী স্বাধীনতা পশ্চিমা ষড়যন্ত্র”—এমন ভুল বার্তা ছড়ানো হয়।

 ৭. সহিংসতা ও মৌলবাদ ছড়ানো

জামায়াত শান্তির কথা বলে কিন্তু তাদের রাজনীতি সবসময় সহিংসতায় ভরা। কোনো আইন, বিচার মানে না; তারা শুধু চায় ইসলামি শাসন, যেটা মূলত তাদের “ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা”।

  • হরতাল ডেকে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারা।

  • বিচারপতিকে হুমকি দেওয়া।

  • সরকার পতনের জন্য দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি।

প্রশ্ন: ইসলাম কি কখনো সহিংসতা সমর্থন করে?

৮. ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা বনাম জামায়াতের অপপ্রচার

ইসলাম বলে:

  • “ধর্মে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই” (সূরা বাকারা ২৫৬)

  • “মানুষের অধিকার রক্ষা করো”

  • “নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহকারী”

জামায়াত যা করে:

  • ভিন্নমতাবলম্বীদের কফিন পাঠায়।

  • নারী নেতৃত্বকে গালি দেয়।

  • যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নেয়।

৯. নতুন প্রজন্মের করণীয়: ইতিহাস জানো, জামায়াত চিনো

আমরা যেন ভুলে না যাই:

  • কে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।

  • কারা দেশের বুকে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

  • কারা ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে।

প্রতিকার:

  • মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে আরও জোরদার করা।

  • ধর্মের অপব্যাখ্যা রোধে প্রগতিশীল ধর্মশিক্ষা।

  • ঘৃণার রাজনীতি বন্ধ করে বিবেককে জাগিয়ে তোলা।

উপসংহার

জামায়াতে ইসলামীর মতো গোষ্ঠী বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর কলঙ্ক। তারা ইসলামকে ঢাল বানিয়ে, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে, নারীকে বঞ্চিত করেছে, তরুণদের মস্তিষ্ক দখল করে নিয়েছে, যুদ্ধাপরাধ করে পবিত্র ধর্মকে অপমান করেছে।

আজ সময় এসেছে ঘুম ভাঙানোর। মানুষকে জানাতে হবে—ধর্মকে যারা রাজনীতির যন্ত্র বানায়, তারা ইসলামের শত্রু। আর জামায়াত ঠিক সেই রকম এক মুখোশধারী গোষ্ঠী—যাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে প্রতিটি বিবেকবান নাগরিকের কণ্ঠে, লেখায় এবং প্রতিবাদে।