সোহাগ পরিবহনের কার্যালয়ে হামলা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে বহিষ্কার

sohag paribohon hamla billal hossain scaled

রাজধানীর মালিবাগে গত বুধবার দিবাগত রাতে সোহাগ পরিবহনের মালিকের ভাইসহ অন্তত সাতজনকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা সোহাগ পরিবহনের কার্যালয় ও মালিকের বাসা ভাঙচুর করে। এই ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

হামলার ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মালিবাগে বুধবার রাত ১১টা ৭ মিনিটের দিকে সোহাগ পরিবহনের কার্যালয়ের সামনে দুই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় চাপাতি, ছুরি ও রড নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীদের সঙ্গে আসা কয়েকজন হাতে তালি দিয়ে উল্লাস করছিলেন। তাঁরা সোহাগ পরিবহনের কার্যালয়েও ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে হামলাকারীদের সোহাগ পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে ঢুকে এক কর্মীকে মারধর করতে এবং ড্রয়ার থেকে টাকার বান্ডিল নিতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সোহাগ পরিবহনের মালিক মো. ফারুক তালুকদার বলেন, বুধবার রাতে ঢাকার বাইরে থেকে সোহাগ পরিবহনের একটি গাড়ি মালিবাগ রেলগেটের কাছে সোহাগ পরিবহনের কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছায়। তখন যাত্রীরা বাস থেকে নামছিলেন। যাত্রীদের নামার পথে দুই ব্যক্তি ধূমপান করছিলেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের তিনজন কর্মী তাঁদের সরে গিয়ে ধূমপান করতে বলেন। এতে তাঁরা ক্ষুব্ধ হন।

ফারুক তালুকদার অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে ধূমপায়ী এক ব্যক্তিকে ফোন করতে দেখা যায়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে চাপাতি, কিরিচ, ছুরি, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অন্তত ৫০ জন দুর্বৃত্ত এসে সোহাগ পরিবহনের কার্যালয় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁর ভাই আলী হাসান তালুকদারসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করেন। রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক ও সভাপতি বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিল্লাল ছিলেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। গতকাল রাতে ঘটনা শোনার পরই বিল্লালকে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোহাগ পরিবহনের কর্মীদের কুপিয়ে আহত করা ও কার্যালয় ভাঙচুর করার ঘটনায় গতকাল দুপুরে সোহাগ গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মকর্তা দেওয়ান মো. আল আমিন বাদী হয়ে রমনা থানায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা বিল্লালসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে রমনা থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৮-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে এজাহারভুক্ত আকাশ ও রুমন ধূমপান করছিলেন। সোহাগ পরিবহনের তিন কর্মচারী তাঁদের সরে গিয়ে ধূমপান করতে বললে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে প্রধান আসামি বিল্লালের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সোহাগ পরিবহনের মালিকের বাড়ির গ্যারেজের সামনের নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষের কাচ ভেঙে ফেলেন। এ সময় সোহাগ কোম্পানির মালিকের ভাই ও কোম্পানির পরিচালক আলী হাসান তালুকদার, তাঁর গাড়িচালক মাসুদ, কোম্পানির কর্মী হাসান তপন, ফরহাদ হোসেন, নাইমুর রহমান আদিব ও মাসুদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। হামলাকারীরা সোহাগ পরিবহনের দুটি কাউন্টারে ঢুকে ভাঙচুর করেন। এতে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। তাঁরা দুটি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রির ১৭ হাজার ৫৭০ টাকা লুট করেন।

গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি পারভেজ ও ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িত জয়নালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।