সংযুক্ত আরব আমিরাতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ ২০২৫। এবারের আসরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে। সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার পর দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হওয়া ঘিরে ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র আগ্রহ।
এই বছর আট দল অংশ নিচ্ছে এবারের এশিয়া কাপের আসরে। উদ্বোধনী ম্যাচে আবুধাবিতে আফগানিস্তান মুখোমুখি হবে হংকংয়ের। দুই গ্রুপে বিভক্ত দলগুলো থেকে শীর্ষ চার দল উঠবে সুপার ফোরে। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ২৮ সেপ্টেম্বর দুবাইতে।
গ্রুপ এ-তে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, স্বাগতিক আমিরাত ও ওমান। গ্রুপ বি-তে আছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও হংকং।
তবে, সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথকে ঘিরে শুধু রোমাঞ্চের সৃষ্টি করেনি, পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি করেছে ভক্তদের মাঝে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম ইতোমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ‘দুই দেশের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা উচিত এবং সীমা অতিক্রম করা যাবে না।’
২০১২ সালের পর দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় নি। সামঝোতা চুক্তির কারণে তারা কেবল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই একে অপরের বিপক্ষে খেলছে। এবার তারা একই গ্রুপে রয়েছে এবং টুর্নামেন্টে তিনবারও মুখোমুখি হতে পারে।
তবে মে মাসের সংঘাতের কারণে এখনো তিক্ততা রয়ে গেছে। চার দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবর্ষণে দুই দেশের ৭০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
এছাড়া, উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত লেজেন্ডস বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে অস্বীকার করে ভারতের সাবেক খেলোয়ারদের দল। ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং প্রকাশ্যে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সীমান্তে লড়াই হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে—এমন পরিস্থিতিতে আমরা ক্রিকেট খেলতে যেতে পারি না। এই বড় সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ক্রিকেট খুবই ছোট বিষয়।’
তবে মাঠে শক্তির বিচারে এগিয়ে ভারত, অন্তত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে এবারের আসরে নামছে। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের ১০-৩ জয়ের রেকর্ড আত্মবিশ্বাস আরো বাড়াচ্ছে। পাকিস্তান অবশ্য খেলবে তাদের দুই তারকা ব্যাটার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ছাড়া। ফর্মহীনতার কারণে এশিয়া কাপের দলে জায়গা পাননি তারা। তবে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। অন্তত অতীত রেকর্ড তাই বলে।
ভারত গত আসরের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। এবারও তারা শিরোপা জয়ের প্রধান দাবিদার। তবে পাকিস্তান-ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও চমক দেখাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান মহারণ তাই কেবল ক্রিকেট নয়, দুই দেশের সমর্থকদের আবেগ, ইতিহাস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে যাচ্ছে।