বাংলাদেশে নারী নির্যাতন: দুই মাসে ২৯৪ নারী আক্রান্ত, ৯৬ ধর্ষিত

নারী নির্যাতন

বাংলাদেশে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ২৯৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৩৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন, এর মধ্যে ২১টি সাধারণ ধর্ষণ এবং ১৮টি দলগত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের সংখ্যা আরো বেড়ে ৫৭টি হয়, যার মধ্যে ১৭টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং দু’টি ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ১৬ জন শিশু ও ১৭ জন কিশোরীও আক্রান্ত হন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছেন যে, নারীর প্রতি সহিংসতা কমানোর জন্য পুলিশ বাহিনীর তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে সরকারের বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভ বাড়ছে। আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ হওয়া উচিত।

ধর্ষণের শিকার হওয়ার সংখ্যা শুধুমাত্র রিপোর্টকৃত ঘটনাগুলি, যা বাস্তবে আরো বেশি হতে পারে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনের কোন না কোন সময় শারীরিক, যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, “বর্তমানে নারীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠী নারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করছে। সমাজে নারীর চলাচলে বাধা দেওয়া, তাদের পোশাক নিয়ে আপত্তি তোলা এবং ধর্মকে হিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির গুরুত্ব দেওয়া হলেও, এখনও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবেদন এসেছে যে, নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আরও বাড়ছে।

ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ধর্ষণের মামলার তদন্তের সময় ৩০ দিনের বদলে ১৫ দিন করা হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ধর্ষণের মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হটলাইন চালু করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ এবং দ্রুত বিচার কার্যক্রম চালানোর দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া, সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে, যা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করছে। দেশের মানুষের জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি একদিকে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি সরকারের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সরকার যদি এই ধরনের সহিংসতা মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কমানোর সম্ভাবনা কম।

এই প্রতিবেদনটি DW এর প্রতিবেদনের আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। আপনার যদি আরও কোনো তথ্য বা সহায়তা প্রয়োজন হয়, তবে অনুগ্রহ করে জানাবেন।